
নকিয়া ২৭২০ ফ্লিপ
উপরের ছবিটি দেখে আপনাকে কেউ যদি বলে এটা স্মার্ট ফোন তাহলে এইটা হয়তো বিশ্বাস করবেন না। এটাই নকিয়া ২৭২০ তবে আজ থেকে ১৫ বছর আগে এই ধরণের ফোল্ড হ্যান্ডসেটটি অনেকের কাছে রীতিমত আরাধ্যের বিষয় ছিল। মুঠোফোনের জগতের এক দশকেরও আগের জেনারেশনের কাছে কল কেটে দেওয়ার জন্য লাল বাটনে প্রেস করার চাইতে ফ্লিপ ফোনটিকে সজোরে বন্ধ করে কল সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার স্টাইলকে একটু বেশি রোমাঞ্চকর ছিল। এখনকার জেনারেশনের কাছে স্মার্টনেস মানেই বিভিন্ন গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট সনাক্তকরণ বা নিজের চেহারা সনাক্ত করে মুঠোফোনের লক খোলা টাচ ফোন। আপনি যদি সত্যি সত্যি চিন্তা করে থাকেন নোকিয়া ২৭২০ ফ্লিপ সেলফোনটি ২০১৯ সালে ব্যবহার করবেন, তাহলে আপনি তিন ধরণের ক্যাটাগরিতে পড়তে পারেন সম্ভবত। হয় আপনি উন্নয়নশীল দেশে বসবাস করেন, আপনি নস্টালজিয়াতে আক্রান্ত অথবা আপনি স্মার্টফোনের চটকদার এপ্সসমৃদ্ধ স্ক্রিণে চোখ বোলাতে বোলাতে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করতে ইচ্ছুক নন।
নকিয়ার ফিরে আসা
বছর দুয়েক আগে HMD বাজারে রেট্রো স্টাইলের ফিচার ফোন এনেছিল। দুই বছর পর iconic 3310 এর একটি আপডেট ভার্সন এবং গত বছর এসেছিল বানানা ফোনের ৮১১০ পুনরায় নির্মিত আরেকটি ফোন যা ম্যাট্রিক্স সিনেমায় ব্যবহৃত ফোনের সাথে সাদৃশ্য আছে। তবে ২০১৯ সালের ৮৯.৯৯ মার্কিন ডলারের নোকিয়া ২৭২০ ফ্লিপ মুঠোফোনটির সাথে এদের পার্থক্য হলো প্রথমবারের মত একটি স্মার্ট ফোনে আনুষঙ্গিক যা যা থাকার কথা তা ২.৮ ইঞ্চির ছোট ডিসপ্লেতে দেখা যাবে এবং T9 কিপ্যাডের মাধ্যমে টাইপ করে এগুলো ব্যবহার করা যাবে। তারমানে আগের ফ্লিপ ফোন ইউজারদের মত আপনাকে হোয়াটসএ্যাপ ,গুগুল ম্যাপ বা মেইল ছাড়া থাকা লাগছে না এই আপডেটেড ফ্লিপ ফোন ব্যবহারে। তবে এ্যাপ্সগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে যেহেতু এটি টাচ ফোনের সুবিধাযুক্ত অবাধ ব্যবহারযোগ্য না এবং এর হার্ডওয়্যার সেরকম উপযোগী নয়। আপনাকে রীতিমত ধ্যানমগ্ন সাধুর মত ধৈর্যশীল হতে হবে এই এপ্সগুলোর সার্ভিস পেতে হলে। গুগল ম্যাপ বা ইমেইল লোড হতে অনেক সময় খরচ হতে পারে। আবার হোয়াটসএপে কারো সাথে চ্যাট করছেন, সেই বার্তাটা লিখতে টাচফোনে যতটুকু সময়ে করতে পারতেন তার দ্বিগুন সময় লাগতে পারে এই ফ্লিপ ফোনে বাটন চেপে চেপে টাইপ করতে।হয়তো আমি বহির্বিশ্বের আধুনিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন না কিন্তু এই ফোনের হার্ডওয়্যারের সীমাবদ্ধতার জন্য আপনাকে অবাধ কাজ করতে ঝামেলা পোহাতে হবে।
নকিয়া ২৭২০ ফ্লিপ এর ফিচারসমূহ
প্রথম বাজারে আসে | সেপ্টেম্বর,২০১৯ |
রঙ | কালো, ধূসর |
নেটওয়ার্ক | 2G, 3G ,4G |
সিম | ডুয়াল ন্যানো সিম |
WLAN | Wi-Fi 802.11 b/g/n hotspot |
GPS | A-GPS, GLONASS |
Bluetooth | v4.2, A2DP,LE |
Radio | Stereo FM Radio, RDS |
USB | v2.0 |
Display | 2.8 inches/ 1.3 inches (secondary) |
Resolution | 240×320 pixels |
Camera | Back 2MP, LED flash |
RAM | 512 MB |
CPU | Dual-core, 1.1 GHz |
Battery | Lithium-ion 1500mAh (removable) up to 700 hours (3G) |
Technology | TFT |
More features | KaiOS, Qualcomm Snapdragon 205 (28 nm), Adreno 304 GPU |
নকিয়া ২৭২০ ফ্লিপ এর ভাল দিকসমূহ
১। রুচিসম্পন্ন ডিজাইন
২।গুগল ও হোয়াটসএ্যাপসহ বিভিন্ন সহযোগী সংযোজন রয়েছে।
৩। একদিনের অধিক সময় ব্যাটারীর স্থায়ীত্ব।
নকিয়া ২৭২০ ফ্লিপ এর খারাপ দিকসমূহ
১। T9 কিবোর্ড থাকার কারণে টাইপিং করতে দীর্ঘ সময় লাগা।
২। মাল্টিটাস্ক করা অসম্ভব।
৩। এটি আসলে একটি ফিচার ফোন।

নকিয়া ২৭২০ কে কি স্মার্ট ফোন হিসেবে দরা যায় ?
১৫ বছর আগের স্টান্ডার্ড হিসেবে ধরলে একে একপ্রকারে স্মার্টফোন হিসেবে ধরা যায়। এটা থার্ড পার্টি এপ্সগুলোতে ইনস্টল করতে অনুমতি দিয়ে থাকে অন্যান্য স্মার্টফোনের মত। এটা ইন্টারনেট সংযুক্ত করে এবং বিভিন্ন অনলাইন সুবিধাসমূহ পেতে সাহায্য করে। এখানে আছে ওয়েব ব্রাউজার, ইমেইল ক্লায়েন্ট,সামাজিক গণমাধ্যমে প্রবেশ করার সুযোগসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সুবিধা দিতে পারে যা আমাদের এখনকার যুগে না থাকলেই নয়। তবে বর্তমানে প্রতিযোগীতার ঘোড়দৌড়ে স্মার্টফোনের টাচ স্ক্রীণের অবাধ সুবিধা এবং দ্রুত কাজকর্ম সম্পাদনে সবথেকে পিছিয়ে থাকবে এটি। এখানে ইনপুট সিস্টেম লিমিটেড T9 কিবোর্ডের মাধ্যমে সম্পাদন করতে হবে। এর কম রিজোল্যুশনের ছোট স্ক্রিণ আপনাকে সন্তুষ্ট করবে না ভিডিও কল করার সময়। হোয়াটসএপে বার্তা পাঠানোর সময় হয়তো আপনি স্মার্টফোন ইউজারদের মত ত্বড়িত্তগতিতে তাদের মেসেজ পাঠাতে পারবেন না এরফলে তাদের সাথে আপনার যোগাযোগে ব্যবধান তৈরি হবে অথবা আপনার ছোট ছোট মেসেজে তারা বিরক্ত হতে পারে যার ফলে আপনাকে তারা অভদ্র ভাবতে পারে। তবে এর সমাধান রয়েছে অবশ্যই। ভয়েস রেকর্ড বা কণ্ঠবার্তা পাঠাতে পারেন।
এর গুগল এসিস্ট্যান্টের সাহায্যে হয়তো তাড়াতাড়ি ওয়েব সার্চ করা সম্ভব, কিন্তু যখন গুগলকে নির্দেশ করবেন, নির্দেশ গ্রহন করার পর ওয়েব ব্রাউজারে পাঠানোর পর লোড হতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে। ২০০৪ সালে হয়তো এটি ম্যাজিক্যাল লাগতে পারত, কিন্তু মুশকিলটা এখানেই যে এখন সময়টা ২০২০। সাধারণমতে, নোকিয়া ২৭২০ ফ্লিপের টার্গেট মার্কেট হয়তো বাজারের চমৎকার স্মার্টফোনগুলির মত চাহিদা মেটাতে পারবে না, তবে এটি ব্যবহৃত হতে পারে স্পা থেকে সরবরাহকৃত ফোন বা আপনার বিকল্প ফোন হিসেবে যা আপনাকে ডিজিটাল যুগে নিজেকে সময় দেওয়ার জন্য যথেষ্ট রিল্যাক্স করতে সাহায্য করতে পারে।
সুবিধাগুলোর দিকে তাকালে এটাও ভুলে গেলে চলবে না HMD global মোটামুটি ব্যবসায় চাল চেলেছে তাদের রেট্রো স্টাইলে পরিকল্পনামাফিক ক্লাসিক থ্রিজি ও ফোরজি সুবিধাসহ নোকিয়া ৩৩১০ এবং নোকিয়া বানানাফোন বর্তমানে নোকিয়া ৮৮১০ হিসেবে ফিরে এসেছে।
এটা স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে হয়তো ইউরোপীয়ানরা এটা পছন্দ করবে না এটা ব্যবহার করতে তবে কিছু আমেরিকান স্রেফ নষ্টালজিয়াতে আক্রান্ত হয়ে এটা কিনতে পারে। তাছাড়া উন্নয়নশীল দেশে এর ব্যবহারকারীরা থাকতে পারে। তবে, মজার ব্যাপার হলো বর্তমানে চীনা কোম্পানীগুলো কম বাজেটে বিশ্বে স্মার্টফোন বাজারে সরবরাহ করছে তাই অনেক এর চাহিদা। তবে, 1500mAh ব্যাটারির দীর্ঘক্ষণ স্থায়ীত্বের সুবিধা থাকায় আমরা এটাকে ইমার্জেন্সী কল করার জন্যও রাখতে পারি।
Leave feedback about this